সোনারগাঁও দর্পণ :
‘টাকা ধ্যান, টাকা জ্ঞান’ এ যেন উপজেলা বিএনপির কিছু নেতার মুল মন্ত্র হয়ে দাড়িয়েছে ! বর্ণচোরার মতো রং পাল্টানো এক মাসুম রানাকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি ! বেশ কিছুদিন ধরে বিভক্তির কথা সোনারগাঁওয়ের বিএনপি রাজনীতির আঁকাশ-বাতাসে চাউর হলেও সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় এ দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। পৃথকস্থানে অনুষ্ঠানে দেওয়া নেতাদের বক্তব্য ও বিভিন্নস্তরের স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে বেড়িয়ে এসেছে এমন তথ্য।
উপজেলা ও পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানাগেছে, সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুম রানা। লেখাপড়ায় আন্ডার মেট্রিক হলেও চাটুকারিতা আর চিটিংবাজিতে বেশ নাম তার। সবশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এস আলম গ্রুপের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পৌঁছে গিয়েছেন কোটিপতি বনে। উঠেছেন জাতে (!) এখন সাধ জেগেছে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে মেঘনা শিল্পাঞ্চল এলাকার অধিপতি হওয়ার।
সে লক্ষ্যে ৫ আগস্টের পর নেমেছেন বিএনপি’র হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান প্রার্থী হওয়ার। নির্বাচনের দিনক্ষণেরও নেই কোন হদিস কিন্তু তার প্রচার-প্রচারণা রয়েছে তুঙ্গে। আর এ নিয়েই স্থানীয় বিএনপিতে তৈরি হয়েছে অর্ন্তঃদ্বন্দ্ব।
মাসুম রানা নির্বাচন করতে চাচ্ছেন ১৩ বছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজে অভিজ্ঞ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বিডিআর এর স্থানে।
উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির ওই নেতারা জানান, স্কুলের গন্ডি না পার হওয়ায় মাসুম রানার ভাগ্যে ছাত্রদল করার সৌভাগ্য না হলেও এক সময় বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের ওয়ার্ডের কর্মী ছিলেন। পরে অবৈধ বালুর ব্যবসা করে কিছু টাকার মালিক হয়ে কিনেছিলেন ওয়ার্ড যুবদল নেতার পদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির ওই নেতাদের দাবি, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বর্ণচোরা ও সুযোগসন্ধানী মাসুম রানার পক্ষ নেওয়ায় তার সাথে দুরত্ব তৈরি হয়েছে অনেক নেতার।
উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের দাবি, মাসুম একজন পল্টীবাজ সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি। সে আওয়ামী লীগের সময় নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও আসনে কায়সার হাসনাত, জাতীয় পার্টির এমপি খোকা থাকাকালীণ খোকার সাথে এবং কিছুদিন পর খেলাফত মজলিসের পক্ষে মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
৫ আগস্টের পর মাসুম রানা আবারো বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগে মান্নানকে বিভিন্ন কৌশলে তার পক্ষে সমর্থনে বাধ্যও করছেন। আর মান্নানও মাসুম রানার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তার কাছের নেতাকর্মীদের চক্ষুশুল হয়ে উঠছেন। যা গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার বিএনপির কর্মী সম্মেলনের একটি অনুষ্ঠানে মান্নানের মামাতো ভাই, বাল্যবন্ধু এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেছেন, মাসুম রানা বিএনপির কেউ না। তাকে যদি দলীয়ভাবে একক সমর্থন দিয়ে কেউ নির্বাচনে বিজয়ী করতে চায়, তাহলে আমরা উপজেলা বিএনপির ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা আমাদের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বিডিআর’কে বিজয়ী করতে এক সাথে কাজ করব।
অপরদিকে একই দিন জামপুর ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে এক কর্মী সম্মেলনে জামপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মুজাহিদ মল্লিক উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের বেশ কিছু স্বভাব পরিবর্তন করে নিজেকে উপযুক্ত সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। যেখানে মুজাহিদ মল্লিক মাসুম রানার প্রসঙ্গ টানেন এবং মাসুম রানা কবে বিএনপির নেতা ছিলেন প্রশ্ন রেখে বলেন, মাসুম রানা বড় জিপ নিয়ে মান্নানের বাড়িতে যান বলে তিনি মাসুম রানাকে নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করেন এমন স্বভাব পরিবর্তনের আহবান জানান।
তবে, নিজ বক্তব্যের বিষয়ে পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মনিরুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন যে, উপজেলা বিএনপিতে মাসুম রানা কোন সদস্য হিসেবে আছেন কি-না তার জানা নাই। তবে, পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে মাসুম রানা নামে কোন সদস্য বা কর্মী নেই। এ কথাটিই তিনি বলতে গিয়ে বলেছেন, মাসুম রানা নামে উপজেলা বিএনপিতে কেউ নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপি সধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, মাসুম রানা উপজেলা বিএনপির কেউ নয়। আর সে এমন বড় কোন নেতা নয় যে তাকে নিয়ে উপজেলা বিএনপি বিভক্ত হবে। গত ১৭ বছর উপজেলা বিএনপির যে ত্যাগী নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, জেল-জুলুম,নির্যাতন সহ্য করেছে সে তালিকায় মাসুম রানা নাই। তাকে আমরা পাকা মার্কা আর খোকার সাথেই বেশি দেখেছি।
তবে, মাসুম রানাকে মৌন সমর্থনের বিষয়ে মান্নান ভাইয়ের ওপর অনেক নেতাকর্মীর অভিমান-অনুযোগ রয়েছে এটা সত্যি। যা থেকে তিনি সরে আসবেন বলেই আমার বিশ^াস। কিন্তু, উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির কোন সুযোগ নেই।
আর মুজাহিদ মল্লিকের বিয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। তিনি যে সকল বিষয় উপস্থাপন করেছেন সে বিষয়ে আমরা ৩০ তারিখ বসব। আশাকরি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
Post a Comment