মাদকে ভাসছে সোনারগাঁও। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী,কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ হাবু-ডুবু খাচ্ছে মাদক নামের এ মরণ নেশায়। বলা যায়, মাদকের কবলে পড়ে যেন এক প্রকার ‘বুদ’ হয়ে আছে পুরো তরুণ সমাজ ও বর্তমান সোনারগাঁওয়ের সমাজ ব্যবস্থা। শুধু মাদকই নয়, মাদককে ঘিরে সমাজে তৈরি হয়েছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর গ্যাং। তাদের দৌরাত্বে সৃষ্টি হচ্ছে নানান সমস্যা। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষ দিন দিন হয়ে উঠছে হিংস্র। লিপ্ত হচ্ছে ঝগড়া-বিবাদ ও বিভিন্ন অপকর্মসহ নানান খারাপ কাজে। মাদকের এ করাল গ্রাসে মুকুলেই ঝরে পরছে অনেক তাজা প্রাণ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কোন কোন সমাজের সমাজপতি, তাদের ছেলে,চাচা-ভাতিজা,ভাগিনা,ভাই,মামা এক কথায় নিকটাত্মীয়রাও জড়িয়ে পড়েছে এ পেশায়। যদি কেউ প্রতিবাদ করতে শুরু করে তাহলে তাকে কিনে নেয়া হচ্ছে চাহিদা মিটিয়ে। করে নেয়া হচ্ছে কাঠের পুতুল। আর এ সমস্ত কাঠের পুতুল তৈরির পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। আর এ সকল রাজনৈতিক নেতারা তাদের লাঠিয়াল বাহিনী ভাড়ী করতে তৈরি করছেন কিশোর গ্যাং। যাদের অর্থের মুল টাকাই আসে মাদক বিক্রির থেকে।
শুধু কিশোর গ্যাংই নয়, কিশোর গ্যায়ের পাশাপাশি মাদক বহনে তৈরি করা হয়েছে নির্দিষ্ট রুট। যা নির্দিষ্ট সময়েই নির্দিধায় চলে যাচ্ছে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে। আর এক স্থান থেকে অন্যস্থানে মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, রিক্সা,সিএনজি চালকদের। এ সকল মাদক পাচারের জন্য সাথে জড়িত চালকদের দেয়া হচ্ছে প্রচুর টাকা। গরীব এ মানুষগুলো অভাবের তাড়নায় হোক বা লোভেই হোক অনেকটা বাধ্য হয়েই বহন করছে ইয়াবা,গাজা, ফেন্সিডিল আর মদ।
প্রায় একমাস অনুসন্ধানের পর এমনই প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে “সোনারগাঁও দর্পণ”র অনুসন্ধানে। সাথে সমাজের সাধারণ ও সচেতন মানুষদের কাছ থেকে তুলে আনা হয়েছে মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ে তাদের অসাধারণ মন্তব্য। যদিও সে সকল মন্তব্যে এসব অপকর্মের জন্য তারা দায়ি করছেন রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসৎ সদস্য ও তাদের সোর্স, বিশেষ পেশার কিছু ব্যক্তি ও সবশেষ সন্তানদের প্রতি পরিবারের অভিভাবকদের অবহেলাকে।
সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় কথার ছলে জুড়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন গান ও মনিষিদের কথা। উদাহরণ স্বরূপ বলেছেন, “এ দুনিয়া এখন তো আর সে দুনিয়া নাই, মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই। এই মানুষের ভিড়ে আমার আসল মানুষ নাই।” এমন মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে তারা তুলে ধরেন তাদের সাধারণ মানুষের সাদাসিধে দৃষ্টিতে দেখা বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা। দাবি করেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে তাদের সোর্স মারফত মাদক সংগ্রহ, মাদক বিক্রির টাকা আদান-প্রদান ও মসোয়ারার কথা। প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিশেষ পেশার কিছু ব্যক্তির মাসোয়ারা নেয়ার ছবিও।
প্রায় এক মাসের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোন কোন এলাকার কোন কোন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বা হোমড়া-চোমড়া নেতা নামক স্থানীয় নামধারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কিভাবে কাদের দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এসব অপকর্ম। কোন রাজনৈতিক নেতা কোন এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তারে বা প্রভাব টিকিয়ে রাখতে তৈরি করছেন কিশোর গ্যাং। কিভাবে চলছে তাদের কিশোর গ্যাংএর সদস্যরা। কোথা থেকে কিভাবে আসছে অর্থ।
প্রায় এক মাসের অনুসন্ধানে “সোনারগাঁও দর্পণ” তুলে এনেছে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কমপক্ষে ৬৫টি কিশোর গ্যাংয়ের দ্বারা দু’শোর উপর মাদক স্পটের চিত্র। যেখানে প্রতিমাসে লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যা জানলে হয়তো অনেকেরই চোখ উঠবে কপালে।
“সোনারগাঁও দর্পণ” সব সময় সত্য প্রকাশে অঙ্গীকার বদ্ধ। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে “সোনারগাঁও দর্পণ” দীর্ঘ প্রায় এক মাস অনুসন্ধানের তথ্য এর পাঠক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সামনে ইউনিয়ন ভিত্তিক সংবাদ তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে। যেখানে প্রতি পর্বে থাকবে নির্দিষ্ট ইউনিয়নের মাদক ও কিশোর গ্যাং এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র।
“সোনারগাঁও দর্পণ” প্রত্যাশা করে তার পাঠক, সমাজের সাধারণ, সচেতন ও প্রতিবাদী মানুষ আরো তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর এ সকল মাদক ব্যবসায়ী, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা ও কিশোর গ্যাংয়ের সংবাদের সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিপথে যাওয়া ভবিষ্যত প্রজন্মকে সঠিক পথে আনার মাধ্যমে ভবিষ্যত দিনগুলোতে সমাজ ও সমাজ ব্যবস্থা কলঙ্কমুক্ত করবে বলেও প্রত্যাশা করে। আশাকরি “সোনারগাঁও দর্পণ”র সকল পাঠক সমাজ থেকে মাদক নামের এই মরণ নেশা থেকে তরুণ সমাজকে বাচাতে সাথে থাকবেন।
Post a Comment