সোনারগাঁও দর্পণ:
মাহফুজুর রহমান কালাম এক শক্তিশালী সাংগঠকের নাম। সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে যিনি হাল ধরেছিলেন শরীর ও মনের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে। যে শক্তি ব্যবহার করে সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে পরাজিত করেছেন তার দুরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়। শিকার হয়েছেন বহু হামলা, মামলা, হুমকী-ধমকীসহ নানান প্রতিবন্ধকতায়। সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের যে কোন নেতা-কর্মীর চেয়ে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিন, নিপিড়ীত অবহেলিত হতে হয়েছে কালাম পরিবারকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের উপদেষ্টা কান্ডারি মাহফুজুর রহমান কালাম নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে। আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে। কেন উপজেলা আওয়ামী লীগে মাহফুজুর রহমান কালামের বর্তমান এ অবস্থান ? এ বিষয়ে ‘সোনারগাঁও দর্পণ’ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছে। অনেকেই অনুরোধ করেছেন নাম প্রকাশ না করতে। কেউ আবার বলেছেন, কখনো পদের জন্যে রাজনীতি করিনি। তবে, সত্যিটা সব সময় বলেছি, ভবিষ্যতেও বলে যাব। নাম প্রকাশ করলে যদি পদ থাকে, না থাক। তবে, সবার দাবি একটা জায়গায় এক। ‘ষড়যন্ত্রের শিকার কালাম’। জেলা ও উপজেলা পর্যায় কোন কোন নেতার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি।
তাদের মতে, একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মাহফুজুর রহমান কালাম অপ্রতিদ্বন্দ্বি। অনেকেই নেতা হয় কিন্তু সাংগঠনিক জ্ঞান সবার থাকেনা। মাঠ সবাই ধরে রাখতে পারেনা। অনেকের মতে, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ চলছে লোক দেখানো ফটোসেশন আর গলাবাজিতে। সাংগঠনিক দিক বিবেচনায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের বিকল্প নেই। এমনটাই দাবি উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতাকর্মীদের।
সনমান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১০ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ১৯ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী নেতা আবু ইসহাক ‘সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তিনজন সদস্য রয়েছে যাদের জীবনে কখনো কোন মিছিল-মিটিং দুরের কথা কোন দিন নামও শুনিনি। তারা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। অথচ আমি ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নের সিদ্দিক মোল্লার মতো ত্যাগী নেতারা উপজেলা আওয়ামী লীগে স্থান পাইনি।
উপজেলা যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতার নাম ও পদবি উল্লেখ করে আবু ইসহাক বলেন, তারা যুবলীগেও আছে, তারা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও আছে। আসলে আমরা রাজনীতি করে টাকা কামাইনি। আমাদের সে রকম টাকা পয়সাও নাই। যারা কমিটি গঠন করবে তাদের দিব। কারণ কমিটিতে স্থান পেতে হলে টাকার বিকল্প নাই। এটাতো আজকাল অনেকের ব্যবসায় পরিণত হইছে।
ইসহাক বলেন, এটা সত্যি যে পৃথিবীতে কারও জন্যে কিছু থেমে থাকেনা। তবে, উপজেলা আওয়ামী লীগে কালামের প্রয়োজন কতটুকু তা প্রত্যেক নেতাই ভালো জানেন। হয়তো স্বার্থের কথা চিন্তা করে তা অনেকে প্রকাশ করবেননা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, কালাম সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। উপজেলা আওয়ামী লীগ শুধু তাকে ব্যবহারই করেছে। আর তিনি অবোধের মতো ব্যবহার হয়েছেন। সেই কারণেই আজ তিনি অবহেলিত, তিনি অনেকের ষড়যন্ত্রের শিকার।
শম্ভুপুরা ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক মোল্লা ‘সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, মাহফুজুর রহমান কালাম কায়সার হাসনাতের বাবা আবুল হাসনাতের হাত ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে আসে। আর আবুল হাসনাতের অন্তিম সময় কায়সার রাজনীতিতে আসে মাহফুজুর রহমান কালামের হাত ধরে। আবুল হাসনাতকে যদি কালাম কায়সারকে রাজনীতিতে এনে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের হাল ধরতে না বলতেন, তাহলে আজ হয়তো কায়সারের রাজনীতিতে আসা হতো না, পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারতেন না। রেজাউল করিমের মতো হ্যাভিওয়েট প্রার্থীকে ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করার একমাত্র উপদেষ্টা মাহফুজুর রহমান কালাম। সেই কালামকে মাইনাস করে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ অন্তঃতপক্ষে আমি কল্পনাও করতে পারিনা।
এছাড়া, গতকাল ২৪ আগস্ট আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বিষয়ে যে সভা হয়েছে সেখানে আমি কায়সারকে স্পষ্ট করে বলেছি যে, মাহফুজুর রহমান কালামের ৩৫ হাজারের ওপর ভোট ব্যাংক আছে। যা বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। আর বর্তমান সভাপতি তিনিতো নিজের কেন্দ্রে কখনোই নৌকাকে বিজয়ী করতে পারেনি, পারবেও না। কালাম ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণতা পাবেনা। একথা বলার পর কায়সার আশ্বস্ত করেছেন কমিটিতে কালামকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তিনি করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া ২৪ আগস্ট বুধবার রাতে সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা যদি চান কালাম থাকবে। না চাইলে থাকবেনা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কোন সুপারিশ করবেনা। এ বিষয়ে আমি আর কোন কথা বলতেও চাইনা বলে ফোন রেখে দেন সামসুল ইসলাম ভূইয়া।
Post a Comment