সোনারগাঁও দর্পণ :
মাথায় টুপি, গাল ভর্তি লম্বা দাড়ি, কপালে নামাজ পরার দাগও আছে। রক্তাক্ত ষাটোর্ধ বাবার অচেতন দেহে বড় ভাই জহিরুল ইসলামের লাথির পর লাথি দেওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য মন ভরে দেখছে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম। তার পাশেই দাড়িয়ে বোন হালিমা খাতুন।
জমি লিখে না দেওয়ায় এভাবেই নিজ পিতা আষাঢ়িয়ার চর এলাকার আব্দুর রহিম (৭০) কে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে তার ঔরষজাত সন্তানেরা। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় নির্যাতনকারী সন্তানদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি উঠে।
অপরদিকে, মুল ঘটনা জানার পর এ ঘটনায় দ্বিতীয় স্ত্রী’কে দোষছেন অনেকে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর গ্রামে আব্দুর রহিমের নিজ বাড়ির সামনে।
স্থানীয়রা জানায়, আব্দুর রহিমের মোট চার সন্তান। এদের মধ্যে দুই ছেলে সাইফুল ও জহির এবং মেয়ে রওশনারা এবং হালিমা। রহিমের প্রথম স্ত্রী বছরখানেক আগে মারা যায়। রহিম দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছাপোষন করলে সন্তানদের জমি লিখে দেওয়ার শর্তে মাস তিন আগে রহিমকে বিয়ে করায়। বিয়ের পর সন্তনদের ১৩ শতাংশ জমি লিখেও দেয় রহিম। বিষয়টি পরে দ্বিতীয় স্ত্রী জানতে পারে। পরবর্তীতে পূণরায় আরও জমি লিখে নিতে ছেলে-মেয়েরা রহিমকে চাঁপ দিলে দ্বিতীয় স্ত্রী বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী’কে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় রহিমের সন্তানরা। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাবার বাড়ি চলে যায় রহিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। রহিম স্ত্রী’কে ফিরিয়ে আনতে চাইলে রহিমকে তার স্ত্রী সাফ জানিয়ে দেয়, তার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে তার (দ্বিতীয় স্ত্রী) বাবার বাড়িতে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে পারলেই কেবল রহিমের ঘর করবে তার স্ত্রী। এরপর জমি বিক্রির চেষ্টা করছে রহিম, জানতে পেরে সন্তানরা রহিমকে চাঁপ দেয় তাদের নামে জমি লিখে দিতে। রহিম এতে রাজি না হওয়ায় রহিমের ওপর প্রায়ই পাশবিক নির্যাতন করতো সন্তানরা। সবশেষ রবিবার দুপুরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে জমি লিখে দিতে আবারও চাঁপ দিলে অস্বীকৃতি জানালে প্রকাশ্য দিবালোকে রহিমকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঁঘাতে হত্যার চেষ্টা করে সন্তানরা।
এ ঘটনা স্থানীয় আব্দুল জলিল নামে এক যুবক তার মোবাইল থেকে ফেসবুক লাইভ করলে তা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয় এবং নির্যাতনের সাথে জড়িত সন্তানদের আইনের আওতায় আনার দাবি উঠে।
সন্তানদের নির্যাতনে রক্তাক্ত আহত আব্দুর রহিম বর্তমানে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
যেহেতু ঘটনাটি একান্তই পারিবারিক এবং থানায় ভুক্তভোগীর পক্ষে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি তাই লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় সোনারগাঁও থানা পুলিশ।
Post a Comment