সোনারগাঁও দর্পণ :
একের পর এক ধর্ষণ করেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে সিরিয়াল ধর্ষক নজরুল ইসলাম (৪৩)। ধর্ষণ করাই যেন তার নেশা। এ পর্যন্ত স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন বয়সের মোট ৮ জন নারীকে ধর্ষণ করেছে এই লম্পট। যাকেই নজরে এসেছে, ছলে-বলে-কৌশলে তার সাথেই দৈহিক সম্পর্ক করেছে এ লম্পট।
গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ৮টি ধর্ষণের তথ্য থাকলেও হয়তো লোক লজ্জা আর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক পরিবার গোঁপনে ঢুকড়ে কাঁদছে, যার খবর সংবাদকর্মীদের কানে এখনো পৌঁছায়নি। এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানায় একাধিক অভিযোগ হলেও পুলিশ নিশ্চুপ বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি স্থানীয় এলাকার মাত্র ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করলে ফুঁসে উঠে স্থানীয়রা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দিঘি চাঁনপুর গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী এবং বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করে পরিবারের ছত্র-ছায়ায় দিনের পর দিন এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্ষণের শিকার একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানায়, নজরুলের এ অপকর্মের কথা তার পরিবারের সবার জানা। সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পান ছোট বোন শামীমার কাছ থেকে।
এমন তথ্যের পর কথা হলে নজরুলের বোন শামীমা নজরুলের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু সে সকল ঘটনাগুলোকে ধর্ষণ বলতে নারাজ তিনি।
তার মতে, একজন মেয়েকে একজন পুরুষ একা কখনোই ধর্ষণ করতে পারেনা। উভয়পক্ষের সম্মতিতেই যা হবার তা হয়েছে। আবার কোন ঘটনার বিপরীতে রয়েছে অর্থের সম্পর্ক রয়েছে বলেও তার দাবি। তবে ‘যা রটে কিছুনা কিছু ঘটে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
১৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পিছনে অর্থ না সম্মতি কোন কারণ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শামীমার দাবি, এ ঘটনাটি একটা ভুল-বুঝাবুঝি মাত্র। কি ধরণের ভুল বুঝাবুঝি জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি। অকপটে স্বীকার করেছেন ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করবেন না। শুধরে নিবেন তার ভাইকে।
এদিকে, নজরুলের একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে সেগুলোর দায়িত্ব পেতেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বর্তমানে পান বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা বিচার শালিসির নামে প্রশ্রয় দিয়ে একের পর ধর্ষণ করতে সুযোগ দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবারের দাবি। ভুক্তভোগীদের মতে, পরিস্থিতি এমন করা হয়েছে যে, নেতারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা মেনে নিতে তারা সে সময় বাধ্য হয়েছেন। এখনো হচ্ছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের বিচার শালিস করেছেন আওয়ামী লীগের এমন নেতাকর্মীরা এলাকায় না থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে গণমাধ্যম কর্মীরা আইয়ুব আলী নামে এক বয়োজ্যেষ্ঠ’র মুখোমুখি হোন। তিনি সম্পর্কে এক নির্যাতিতার মায়ের চাচা। আইয়ুব আলী জানান, তিনি কোন বিচার করেননি। তবে, ঘটনার পর ধর্ষক নজরুলের চার বোন এবং ধর্ষিতার চার বোন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সিদ্ধান্তটা শুধু আইয়ুব আলীকে তার বাড়িতে গিয়ে জানান।
ধর্ষণের বিচার শালিস করায় অপর অভিযুক্ত উপজেলা কৃষক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন বলেন, সামাজিক বিচার শালিসে ধর্ষণের বিচার করার কোন বৈধতা নাই। যদি কেউ করে থাকে আমি জানিনা। তবে, নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষে কেউ আমার কাছে আইনি সহযোগিতার জন্য আসলে আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁও থানার ওসি মফিজুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছেন। মামলাও হয়েছে। অভিযুক্ত নজরুলকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
Post a Comment