সোনারগাঁও দর্পণ :
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির ১নং সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতেন। সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের এমন মন্তব্যের পর (যদিও আরও ২/১ জন অভিযোগটি করে) বিষয়টি সামাজিক ও গণমাধ্যমে একপ্রকার ঝড় ওঠে।
কায়সার হাসনাতের এমন মন্তব্যের পর এ বিষয়ে এক ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী’র সাথে আমেরিকায় অবস্থানরত উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এ্যাড.সামসুল ইসলাম ভুইয়ার কথিত (যেহেতু, সে ফোন আলাপ আদৌ সত্য কিনা, বা তিনি যে ফোনে কথা বলেছেন তার কোন প্রমাণও উপস্থাপন করেননি) ফোন আলাপ প্রকাশের পাশাপাশি একজন চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সদস্য ও ছাত্র শিবিরের সদস্য (অভিযোগ অনুযায়ী) কিভাবে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায় পদ-পদবি পায় এমন প্রশ্নে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ‘সোনারগাঁও দর্পণ’র কাছে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও নাারয়ণগঞ্জ -৩ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার।
ফোনে কি বলেছেন সামসুল ইসলাম ভুইয়া ?
(ফোনে দাবি করা কথার শুধু মুল বক্তব্য তুলে ধরা হল)
উপজেলার বারদী ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ নামে একজন ডাঃ বিরুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার কাছে জানালে তিনি বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কিছুদিন আগে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সামসুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জামালপুর আসনের সাংসদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের অফিসে যান। তখন সেখানেও বিরুর বিষয়ে একই অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তখন মির্জা আজম বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল দেন এবং সে কথা উপস্থিত সকলকে লাউড স্পীকার দিয়ে শোনান। যেখানে মোয়াজ্জেম হোসেন ডা. বিরুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বিকার করে উল্টো বলেছেন, ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন এবং মোয়াজ্জেম হোসেনের তত্বাবধানে ছাত্রলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন বলে দাবি করেন।
এছাড়াও ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরুর মরহুমা মা বেগম মনোয়ারা চৌধুরী সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এবং তার মায়ের জানাযাতে তৎকালীণ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ হাই উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করা হয়।
সোনারগাঁও দর্পণ’কে কি বলেছেন কায়সার !
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট রাত ৯টার দিকে সোনারগাঁও দর্পণ’র এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার হাসনাত বলেছেন, ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান প্রস্তুতির বিষয়ে ৮ আগস্ট সভা হবে এবং আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যদের থাকতে বলা হয়েছে। সে ম্যাসেজ ডা. বিরুকে জানালেও তিনি থাকেননি।
৮ আগস্ট আহবায়ক কমিটির মোট ২২ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। বিরুসহ ৪জন ছিলেন না। ৪ জনের মধ্যে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করলেও সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার সাথে সার্বক্ষণিক মোবাইলে যোগাযোগ রাখছেন এবং তার (সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া) সাথে সবসময় যোগাযোগ করে কথা বলে আমরা সকল কাজ করেছি।তার সাথে বৃহস্পতিবার রাতেও সোনারগাঁও দর্পণ’র সাথে কথা বলার কিছু আগে কথা হয়েছে বলে জানান কায়সার। তবে টেলিফোনে ডা. বিরুর বিষয়ে কোন কথা হয়ে বলে কিছুই বলেননি।
সাবেক এ সাংসদ জানান, ৮ আগস্টের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ১৫ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান করা হবে। সেই ম্যাসেজও ডা. বিরুকে জানানো হয়েছে কিন্তু তাতেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
তিনি কি করলেন, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে সভার আয়োজন করলেন।
কায়সার আরও বলেন, যে কোন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু’র শোক দিবসে ব্যক্তিগতভাবে করতেই পারেন তাতে দোষের কিছু নেই কিন্তু তিনি যখন কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকেন এবং সে সংগঠনের একটি ভাইটাল পদে থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যই সে সংগঠনের সিদ্ধান্তকে আগে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে করলে সেটাও সংগঠনকে জানাতে হবে। নিজেই যদি নিজের সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেন আর বাস্তবায়ন করেন তাহলে সংগঠনের কি প্রয়োজন বলে প্রশ্ন রাখেন কায়সার।
১৫ তারিখের আগের দিন পৌরসভায় তার প্যান্ডেল কে-বা কারা ভাঙচুর করেছে সে ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগকে তিনি আজও কিছুই জানাননি। উল্টো কোন এক ইউটিউবে বক্তব্য দিয়েছেন যে তার প্যান্ডেল ভাঙচুর হয়েছে।
১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানের পর এক জরুরী সিদ্ধান্তে ১৮ আগস্ট বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। যে সভাতে বলা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্যরা থাকবে। অন্যকোন অঙ্গসংগঠনকে সে সভায় ডাকা হয়নি। আর সে সভার বিষয়ই ছিল “১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস কর্মসূচির পরবর্তী পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন এবং ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ”। সে ম্যাসেজও তাকে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি আসেননি।
কায়সার হাসনাত বলেন, ডা. বিরু সাহেব যদি নিজে নির্দোষ থাকতেন তাহলে তিনি অন্যকোন সভা না হোক অন্তত ১৮ তারিখের সভায় থেকে বিষয়টি জানাতে পারতেন বা নিজের কথা বলতে পারতেন।
আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, আর যিনি স্ট্যাটাসটি পোষ্ট করেছেন তিনি আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির কেউ কি-না আমি জানিনা। বা কে কি দিয়েছে তাও আমি দেখিনি বা শুনিনি। আপনি (সোনারগাঁও দর্পণ’র প্রতিবেদক) বলার পর আপনার কাছ থেকে শুনে আমি আমার কথাগুলো বলছি।
আপনার কথা মতো আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, কিছুদিন আগে আহবায়ক কমিটি মির্জা আজম সাহেবের কাছে গিয়েছেন সেটা কবে গিয়েছেন আমার জানা নাই। কিছুদিন আগে বলতে হয়তো ১৫ তারিখের কয়েকদিন আগে বা ১৫ আগস্টের পর আর ১৮ আগস্টের আগে। যা সম্ভব না। কারণ, আহবায়ক সাহেব দেশের বাইরে। আর আগের কমিটির বিষয় এক-দেড় বছর আগের ঘটনা। এ সময় কায়সার হাসনাত প্রশ্ন করেন, এক বছর আগেই তারা এ বিষয়টি মির্জা আজম সাহেবের কাছে উত্থাপন করেন। তারা জানেন কিভাবে যে, এতদিন পর এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠবে ?
পরে তিনি বললেন, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল। কে কার ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদের বিষয়ে বলবে আর আমরা সে কথায় কান দিব এমনটাতো না। যদি আওয়ামী লীগের কেউ কিছু সাংগনিকভাবে বলতে চায় তাহলে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী লিখিতভাবে বলতে হবে। এমনতো হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনায় আসার জন্য মনগড়া একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আর সে কথার কোন প্রমাণও তিনি দেননি।
Post a Comment