মোকাররম মামুন
আজ পবিত্র ‘লাইলাতুল বরাত’। অনেকে ‘শব-ই-বরাত’তো বলেন। হাদিস শরিফ মোতাবেক, শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনীতে এ রজণী পালন করা হয়। পবিত্র হাদিস শরীফে রাসুল (সা:) শবে বারাআত’কে লাইলাতুন্ নিসফ্ মিন’ বলেছেন। সে অনুযায়ী আরবি মাসের ১৫ শাবান দিবাগত রাতে (মুলত এশার নামাজের পর থেকে) মুসলিম সম্প্রদায় এ রজনী পালন করে থাকেন। এ রজনী মুসলীম জাহানের জন্য মহিমান্বিত, বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ।
‘শব’ শব্দটি ফরাসী ভাষা। এর অর্থ রাত বা রজনী। বারাআত অর্থ মুক্তি, অব্যাহতি, নিষ্কৃতি, অব্যাহতি ইত্যাদি। এ অর্থে শবে বরাতের অর্থ দাড়ায় মুক্তি, অব্যাহতি ও নিষ্কৃতির রজনী। এ রজনীতে আল্লাহ সোবহান তায়ালা পাপী বান্দাদেরকে মুক্তি পেতে আহ্বান করেন।
পবিত্র এ রাতের অনেক তাৎপর্য ও ফজিলত রয়েছে। হযরত আয়শা (রা:) থেকে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা:) হযরত আয়শা (রা:)’কে বলেন, “ হে আয়শা ! এ রাতে কি হয় জান ?” হযরত আয়শা (রা:) বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুল (সা:) বলেন, এ রাতে আগামী বছর যত শিশু জন্ম নিবে এবং মৃত্যুবরণ করবে তাদের নাম লেখা হয়। মানুষের বিগত দিনের সকল আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং মানুষের রিজীক অবতীর্ণ হয়। (মিশকাত শরীফ প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১১৫)
অন্য এক হাদিসে হযরত উসমান (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, শাবানের ১৫ তারিখ রাতে শবে বরাত থেকে পরবর্তী শবে বরাত পর্যন্ত মানুষের বয়স নির্ধারিত হয়। এমনকি এ সময়ের মধ্যে কেউ বিয়ে করে তার সন্তান জন্ম নেয় অথচব দুই শাবানের অন্তবর্তীকালীণ সময় যারা মারা যাবে তাদের তালিকায় তার নাম রয়েছে।
‘লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত’ মহান আল্লাহ সোবহান তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মার জন্য এক বিশেষ উপহার। বিশেষ করে বান্দার বিগত দিনের সকল প্রকার গুনাহের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ নৈকট্য লাভের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য নির্ধারনের অপূর্ব সুযোগ।
আমরা যদি রাত জেগে কোরআন তিলওয়াত, নফল নামাজ, বেশি বেশি করে কাজা নামাজ আদায়, জিকির আসগার, ইস্তেগফারসহ ভালো ও ফজিলপূর্ণ আমল করতে পারি তাহলে আশা করতে পারি আল্লাহ আমাদের গুনাহ্ মাফ করবেন।
হাদিসে উল্লেখ আছে, সূর্যাস্তের পর আল্লাহ সোবহান তায়ালা পৃথিবীর প্রথম আঁকাশে অবস্থান করেন এবং বান্দাদেরকে তার দিকে ডাকতে থাকেন। বলতে থাকেন, আমার কোন বান্দা আছো, যে তোমার গুণাহ মাফ করাতে চাও। কে আছো যে তোমার রোগ থেকে মুক্তি চাও, কে আছো যে তোমার রিজিক বাড়াতে চাও।”
হযরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা:) সূত্রে বর্ণিত আছে, হুজুরে পাকস (সা:) বলেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সোবহান তায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেশী লোক ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনি হিŸান, হাদিস নং ৫৬৬৫, আল মু’জামুল কাবীর ২০/১০৯, শুআবুল ইমান, হাদিস নং ৬৬২৮)
হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, এক রাতে রাসুল (সা:) উঠে নামাজে দাড়ালেন। সিজদায় তিনি এতটা দীর্ঘ সময় অতিক্রম করলেন যে আমি ভয় পেয়ে যাই যে, তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন কি-না। এক সময় আমি বিছানা থেকে উঠে রাসুল (সা:) এর বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া দিই। বিশ্বাস হলো তিনি বেঁচে আছেন। পরে বিছানায় চলে আসি। পরে রাসুল (সা:) নামাজ শেষে আমাকে বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি ধারণা হয়েছে যে নবী তোমার সঙ্গে সীমা লঙ্ঘন করেছে ? আমি উত্তরে বলি, জি¦-না আল্লাহ রাসুল ! তবে, আপনার দীর্ঘ সময় সিজদায় আমার মনে হয়েছিল আপনি না মৃত্যুবরণ করেছেন।
এরপর রাসুল (সা:) বলেন, হে আয়েশা ! তুমি কি জানো আজকের এ রাতটি কি ? আয়েশা বলেন, আমার আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভারো জানেন। পরে তিনি আমাকে বললেন, এ রাতে আগামী বছর যত শিশু জন্ম নিবে এবং মৃত্যুবরণ করবে তাদের নাম লেখা হয়। মানুষের বিগত দিনের সকল আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং মানুষের রিজীক অবতীর্ণ হয়। তবে, হিংসুক লোকদের তার অবস্থানের ওপর ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস নং ৩৮৩৫)।
আল্লাহ সোবহান তায়ালা যেন আমাদের সকলকে শবে বরাতের ফজিলত নসিব করেন। তিনি যেন আমাদের হিদায়েত দান করেন। আমিন।
Post a Comment