সোনারগাঁও দর্পণ :
পুলিশ বলছে কাউসার মটরসাইকেলে থাকাকালীণ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। অপরদিকে নিহত কাউসারের পরিবারের দাবি, কাউসারকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ হিসেবে জানায়, নিহত কাউসারের অন্ডকোষ ছিল থেতলানো আর ডান কানের লতির দিকে কিছু দিয়ে ছিদ্র করা হয়েছে এমন ছিদ্রও দেখেছে মরদেহ গোসল করা একাধিক ব্যক্তি আর পরিবারের সদস্যরা। কাউসারের পরিবারের দাবি, নিহত কাউসারের বন্ধু গোলজার তাকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। নিহত কাউসারের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ষোলপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত জাফর মিয়া। আর কাউসারের বন্ধু গোলজার পিরোজপুর ইউনিয়নের পাঁচআনী গ্রামের তাইজউদ্দিনের ছেলে। গত রেবাবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে কুমিল্লার ইলয়টগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কাউসারের লাশ পায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকে কাউসারের বন্ধু গোলজার লাপাত্তা। তবে, গোলজারের ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি কাউসারের প্যান্টের পকেট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি মরদেহের সাথে সামনে পুলিশ লেখা একটি মটরসাইকেলও সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। যে মটরসাইকেলটি কাউসারের বন্ধু গোলজারের মেয়ে স্বামীর বলে জানায় নিহতের পরিবারের সদস্য ও পাঁচআনী গ্রামের স্থানীয়রা।
নিহত কাউসারের ছোট ভাই মাহবুব সোনারগাঁও দর্পণ’কে জানায়, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে গোলজারের মেয়ে জামাতা মটরসাইকেলে করে তাদের বাড়ি থেকে কাউসারকে ইলিয়গঞ্জ গরু কিনতে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাউসার তার মায়ের কাছ থেকে গরু কেনার জন্য একলাখ টাকাও সাথে নেয়। পরে তার সাথে কথা রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে। সে সময় কাউসার জানায় তারা দু’জন ঢাকা কোন এক কাজে রয়েছে। ফিরতে দেরি হবে। পরে শনিবার রাত দুইটার দিকে কাউসারের স্ত্রী পরিবারের সদস্যদের জানায়, কাউসার বাড়িতে না ফেরার কথা। সে সময় মাহবুব ফোন দিলে কাউসার জানায়, তাকে পুলিশ আটক করেছে এবং ছাড়িয়ে নিতে টাকা চায় পুলিশ। কেন ধরেছে, কত টাকা চায় বা সাথে কে আছে জানতে চাইলে কাউসার জানায়, সাথে গোলজার ছিল। তবে সে তাকে রেখে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে জানতে চাইলে কাউসার জানেনা বলে জানায়। কোন জায়গার পুলিশ ধরেছে এমন প্রশ্ন করলে পুলিশের কাছে কাউসার কোন থানা জানতে চাওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর কাউসার তার ভাই মাহবুবের মোবাইলে কল দিয়ে জানায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে চিন্তা না করার জন্য। সে বাড়ি ফিরছে বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় অপর প্রান্ত থেকে। এরপর বেশ কয়েকবার কল করলেও কাউসার আর ফোন রিসিভ করেনি।
এ ঘটনার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আবার কাউসারের মোবাইল সেটে ফোন দিলে মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন রিসিভ করে মোবাইলের ব্যক্তি (কাউসার) অজ্ঞান অবস্থায় মহাসড়কের পাশে পরে রয়েছে বলে জানানো হয়। কোন জায়গায় পড়ে আছে জানতে চাইলে ইলিয়টগঞ্জ ইটখোলার পাশে বলে জানায়। মোবাইলে কে কথা বলছেন জানতে চাইলে পরিচয় না দিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা বলে কেটে দেয় সংযোগ।
পরে কাউসারসহ পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে দেয়া স্থানে গিয়ে আবার ফোন দিলে পুলিশ তাদের থানায় যেতে বললে পরিবারের সদস্যরা থানায় যায়। সেখানে গিয়ে কাউসারের পরিচয় সনাক্ত করার পর এবং তারাই কাউসারের পরিবারের সদস্য প্রমাণ পাওয়ার পর পোষ্টমর্টেম তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তরের একটি কাগজ দিয়ে লাশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পুলিশ এবং রোড এক্সিডেন্টে নিহত হয়েছে জানিয়ে কোন মামলা করতে হবেনা জানিয়ে লাশসহ পাঠিয়ে দেয়। এমনকি পোষ্টমর্টেম করার খরচ বাবদ ৬ হাজার ৪শ টাকাও রেখে দেয় পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধার করা ইলয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের এসআই (নিঃ) সুজন চন্দ্র হালদারের বরাত দিয়ে মাহবুব সোনারগাঁও দর্পণকে জানায়, কাউসারের পকেট থেকে গোলজারের মোবাইল সেট উদ্ধারের সময় তার মোবাইলের সিম ছিল উল্টানোবস্থায়। সিম ঠিক করে পুণরায় প্রবেশ করানোর পরই গোলজারের মোবাইলে একজন ফোন দিলে পুলিশ রিসিভ করে। পরিচয় জানতে চাইলে জানায়, ফোন দেয়া ব্যক্তি আজহার। তিনি নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন সদস্য। আর যে মোবাইলে কথা হচ্ছে সে ওই পুলিশ সদস্যের মেয়ের স্বামী। এ সময় ভিডিও কলে মটরসাইকেল দেখানোর পর মৃত ব্যক্তিকে (কাউসার) চিনেন না এবং মটরসাইকেল তার বলে সনাক্ত করেন।
সুরতকহাল রিপোর্ট করার সময় নিহতের শরীরের মটর সাইকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মতো কোন সিনডম দেখা যায়নি স্বীকার করে ইলয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের এসআই সুজন চন্দ্র হাওলাদার সোনারগাঁও দর্পণ’কে জানান, মটরসাইকেলটি অক্ষত ছিলনা। মটরসাইকেলের ব্যাটারী ও এক সাইট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হেলম্যাট ভাঙ্গা ছিল। কানের নিচে ছিদ্র তাদের চোখে পড়েনি তবে, যদি এমন কিছু থাকে তা অবশ্যই পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে আসবে। আর কাউসারের পকেটে গোলজারের মোবাইল পাওয়ার বিষয়ে বলেন, অনেক সময় যিনি মটরসাইকেল চালান তিনি চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলতে পারবেননা ভেবে সাথে থাকা ব্যক্তির কাছে মোবাইল রাখেন এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে, সবকিছুর সমাধান পাওয়া যাবে গোলজারের হদিস পেলে বলে তিনি জানান।
এদিকে কাউসারের লাশ পাওয়ার পর গত রবিবার মাগরিব নামাজের পর দরগাহ্ বাড়ি মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে দরগাহ্ বাড়িতেই লাশ দাফন করা হয়েছে।
Post a Comment