সোনারগাঁও দর্পণ :
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্রের দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস বাহিনী সম্মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা করে।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যে ৩০ লাখ ব্যক্তি শহীদ হোন তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়। কারণ এ হত্যাকাণ্ড ছিল তাদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত জেনেই বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাওয়া যায়, বাঙলার বুদ্ধিজীবিদের হত্যার নীল নকশা শুরু হয়েছিল মুলত ১৯৭০ সালের গণভোট বা ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন অথবা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরেই। আর জাতিকে মেধাশূন্য করতেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধের বিশেষ সময় তারা নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে নদী, খাল-বিলে ফেলে রাখে।
মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে সেদিন বাংলার সূর্য সন্তান অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ডা.আলিম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, ড. ফজলে রাব্বী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক জিসি দেব, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেককে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উঠিয়ে ভিন্নস্থানে নিয়ে হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ হওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধে অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধে যে সকল দোষিদের এখনো ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি, দ্রুততম সময়ে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে সরকার জাতিকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করবে ‘সোনারগাঁও দর্পণ’ এই প্রত্যাশা করে। পাশাপাশি দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা।
Post a Comment