সোনারগাঁও দর্পণ :
‘রোজা’ ফরাসি শব্দ। আরবিতে ‘সওম’ (একটি হলে) আর বহুবচন (একাধিক) হলে ‘সিয়াম’। যার বাংলা অর্থ ‘বিরত’ থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাসসহ যে কোন ইসলাম বিরোধী কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকা।
এটা এমন এক পবিত্র মাস, যে মাসের প্রথম দিকে রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিকে নাযাত ( দোযখ থেকে মুক্তি)। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন অধীনস্থ দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে, মহান আল্লাহ তার জীবনের গুনাহ মাফ করে হালকা করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকী)
সিয়াম বা রোজা সম্পর্কে আল্লাহ সোবহানতায়ালা পবিত্র ‘কোরআন’ এর সূরা বাকারার ১৮৩ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। একই সূরার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় আর দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলিত। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
অপর হাদিসে আছে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ছাড়া ওই দরজা আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
হাদিসে আরো এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। রোজাই শুধুমাত্র আমার (আল্লাহ) জন্য। আর আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরূপ।
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
আরো আদেশ করা হয়েছে, তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ যদি তার সাথে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে সে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহর সাথে তার প্রিয় বান্দার প্রেম বিনিময়ের সবচেয়ে উত্তম সময়। কারণ এই মাসেই নাযিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। তাই এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা অন্য মাসের চেয়ে অনেক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। হাদিসে আছে, এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো (সোবাহানাল্লাহ)।
এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার ছওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব কমবে না।
রাসুল পাক (সা.) বলেছেন, যে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সাথে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন। যার পর সে পূণরায় তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত।
এছাড়াও রোজা নিয়ে অনেক অনেক হাদিস রয়েছে যা আমাদেরকে রোজার তাৎপর্য সস্পর্কে জানায়। মহান আল্লাহ সোবহানতায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত দান করুন আমিন।
Post a Comment