সোনারগাঁও দর্পণ :উচ্চ আদালতও আদালত, এই আদালতও আদালত। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেইতো আর সাথে সাথে সকল আদেশ পালন করা সম্ভব হয়না। দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করতে হলে এই আদালত (এসিল্যান্ড অফিস) এর প্রসেস মেনেই নিষ্পত্তি হবে। মোক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিবিধ মামলার নিষ্পত্তি বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের মেয়াদ শেষে এসিল্যান্ডকে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি রবিবার (১০ আগস্ট) এমন মন্তব্য করেন সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জুরুল মোর্শেদ।
জানাগেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনারগাঁও সার্কেল, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জে চলামান বিবিধ মোকদ্দমা নং- ১১৫/২০২৩ তে বিবাদী মোঃ মোক্তার হোসেন বিগত ০৫/০৩/২০২৫ ইং তারিখে "সূত্রে বর্ণিত মোকদ্দমার বাদী বিবাদীর মধ্যে একই তফসিলভূক্ত সম্পত্তি নিয়ে অত্র আদালতে বিবিধ মোকদ্দমা ১০৯/২০১০, বিবিধ মোকদ্দমা ৩৮/২০১৯ এবং বিবিধ মোকদ্দমা ৩৮/২০১৯ এর রায়ের বিরুদ্ধে অত্র মোকদ্দমার বাদী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে মিস আপীল মোকদ্দমা ১৬১৪/২০২২ নিষ্পত্তি হওয়ায় আইনত ও ন্যায়ত সূত্র বর্ণিত মোকদ্দমাটি চলতে পারে না বিধায় মোকদ্দমাটি নথিজাত করন এর প্রার্থনা।" শীর্ষক একটি দরখাস্ত দেন।
কিন্তু উক্ত দরখাস্তটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনারগাঁও সার্কেল, সোনারগাঁও সরকারি পদ, পদবি ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিষ্পত্তি না করায় বিবাদী হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন মোকদ্দমা নং- ৮৯৭৮/২০২৫ দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিগত ০৪/০৬/২০২৫ ইং তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে শুনানী করে দরখাস্তটি ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনারগাঁও সার্কেল, সোনারগাঁওকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বিবাদী পক্ষ বিগত ৩০.০৬.২০২৫ইং তারিখে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে এবং বিগত ০৯.০৭.২০২৫ ইং তারিখে হাইকোর্টের আদেশ এসিল্যান্ড অফিসে জারি করেন। বিগত ০৮.০৮.২০২৫ ইং তারিখে ৩০ দিন অতিবাহিত হয়। কিন্তু মঞ্জুরুল মোর্শেদ সরকারি পদ, পদবি ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সরাসরি লঙ্ঘন ও অমান্য করে গত ১০.০৮.২০২৫ইং তারিখ পর্যন্ত দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করেন নাই।
এছাড়াও বিবাদী বিগত ১৩.০৪.২০২৫ ইং তারিখে সহি মুহুরি নকল চেয়ে দরখাস্ত করলেও নকল প্রদান করেন নাই। এ বিষয়ে বিগত ২৬.০৬.২০২৫ইং তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর মাধ্যমে জাস্টিস ডিমান্ডিং নোটিশ প্রেরন করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনারগাঁও সার্কেলকে সহি মুহুরি নকল প্রদানের জন্য অনুরোধ করলেও চলতি বছরের ১০ আগস্ট পর্যন্ত নকল প্রদান করেন নাই।
মঞ্জুরুল মোর্শেদ ৩০ দিনের মধ্যে দরখাস্তটি নিষ্পত্তি না করে শুধু হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করেন নাই, রাষ্ট্রের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
হাইকোর্ট ৪ জুন ২০২৫ তারিখে আদেশ দেন, এসিল্যান্ড যেন আবেদনটি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করেন।
রিট আবেদনকারী মোক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, “হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পরও দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করেননি ভূমি অফিস। এমনকি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পরও মামলার নকল পর্যন্ত আমাকে দেয়নি।”
মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিটের আদেশের কপি ও জাস্টিস ডিমান্ডিং নোটিশের কপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে সোনারগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মোক্তার হোসেন বলেন, দরখাস্তটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তবে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী এসিল্যান্ড দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করবেন।
হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া সময় বিগত ০৮/০৮/২০২৫ ইং তারিখে শেষ হয়েছে অথচ আজকে ১০/০৮/২০২৫ ইং তারিখে দরখাস্তটি কেন নিষ্পত্তি হয়নি,
এমন প্রশ্নে এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
তবে, নকল প্রস্তুত করে এসিল্যন্ডের টেবিলে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি স্বাক্ষর করলেই দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।
একটি নকল দিতে ৪ মাস সময় লাগে কি-না? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মহসিন মিয়া বলেন, অনেক বিবিধ মোকদ্দমা। এখন এই বিবিধ মোকদ্দমার কথা বলতে পারছি না। তবে ধ্যর্য তারিখ ছাড়া কোন দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়নি। হাইকোর্ট আদেশ ৩০ দিনের বেশি হলেও সমস্যা নাই। আগামী ধার্য্য তারিখে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করে একেবারে নকলসহ আদেশের কপি দিয়ে দিবো।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জরুল মোর্শেদ বলেন, হাইকোর্ট যে দরখাস্তটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন তা নিষ্পত্তি হয়নি। দেখেন, এসিল্যান্ড অফিসও একটি কোর্ট। এখানে মামলা নিষ্পত্তির কিছু প্রসেস আছে। এই আদালতের প্রসেস অনুযায়ীই দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের পরও দরখাস্তটি নিষ্পত্তি না করা এবং জাস্টিস ডিমান্ডিং নোটিশ পাবার পরও নকল না দেওয়ায় সহজেই বুঝা যায় এই অফিসে সাধারণ মানুষ কি সেবা পান।
সোনারগাঁওয়ের এসিল্যান্ড মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ পালন করতে আইনত বাধ্য হওয়া সত্বেও পালন না করায় ওনি পদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। দরখাস্তকারীর উচিত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে কন্টেম পিটিশন ফাইল করা।