সোনারগাঁও দর্পণ :
মানুষের ইহকাল ও পরকালের জন্যে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান মহাপবিত্র গ্রন্থ পবিত্র ‘আল কোরআন’ সৃষ্টির মাস পবিত্র মাহে রমজান আজ থেকে শুরু হয়েছে। এ মাসে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের জন্যে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা যারা জীবদ্দশায় এ মাস পেয়ে থাকি তারা যে কতো ভাগ্যবান তা নিন্মে উল্লেখ করা আয়াত ও হাদিস পরলেই বুঝতে পারি।
আল্লাহ সোবহান তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা বাকারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, “রমজান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্যে হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নির্দেশনাবলী ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে, সে যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে, অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্যে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।”
একই সুরার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমার পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”
‘সাওম’ অর্থ বিরত থাকা; এর বহুবচন ‘সিয়াম’। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সাওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশ্যে পানাহার ও যৌনসম্ভোগসহ সকল অপরাধমুলক কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে সুরা-২ বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলেন,“ সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তরবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। এতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্যে স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বরন করতে পারে।”
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, খÐ- ৩, হাদিস: ১৭৭৫)।
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের নিয়তে রমজানে রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমজানে রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, প্রথম খÐ, হাদিস: ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)।
সিয়াম বা রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ব। এটি এমন একটি আদেশ যা প্রাপ্তবয়স্ক তথা সাবালক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ ইবাদত। তবে, ঋতুমতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিরা এই রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি, যাঁদের আবার সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তাঁরা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রহণের উপযুক্তদেরই এই ফিদিয়া প্রদান করা যাবে।
তাই আমরা যেন আল্লাহ সোবহান তায়ালা আমাদের সকলকে সহি বুঝ দান করুন। পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত নসিব করুন। আমিন।
Post a Comment