সোনারগাঁও দর্পণ :
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ি যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অনেক ত্যাগ স্বীকারের পর পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাট থেকে দেশকে রক্ষা করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আজ বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে স্মরণীয় অংহকার আর গৌরবের দিন। দিনটি একদিকে বিজউল্লাসের অপরদিকে, বেদনারও। তবে যেহেতু, দুঃখের পরই সুখ আসে তাই বাঙালীরা বিজয় আনন্দেই মেতে উঠে এ দিনে। সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয় ছুটি। নেয়া হয় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সম্পাদনের। দিবসটিতে সরকারী,বে-সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। তাছাড়া, যে কোন দেশের যেকোন ব্যক্তি ও সংগঠনের এ দিবসটি পালন করার অধিকার রাখে। অবশ্যই আছে এবং তাই উচিত। কিন্তু তা হতে হবে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় এসেছে তাদের যথাযথ মর্যাদার মাধ্যমে। অবমাননার মাধ্যমে নয়।
যেহেতু, বিএনপি দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল। আর যুবদল সে দলের সহযোগি সংগঠন। যে সংগঠনের রয়েছে অনেক সুনাম। তারাও জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান এবং জানিয়েছেন। কিন্তু সোনারগাঁওয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর নামে যা হয়ে গেল তা-কি আসলেই শ্রদ্ধা জানানো, না-কি ফটোশেসন করে দলের হাইকমান্ডকে জানানো যে আমরা মাঠে আছি। সামনে কিন্তু আমি উমুক পদটি চাই, তা বুঝানো।
জানাগেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান শহীদ মজনু পার্কে বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্বে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাওয়ার পর তার ছেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সজিব তার সাথে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান একই জায়গায়। তবে, ফুলের সাথে বেদিতে জুতাও নিয়েছেন। শুধু সজিবই নয়, তার সাথে থাকা প্রায় সকল নেতাকর্মীদেরও একই অবস্থা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি তারা শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন না-কি অবমাননা করতে।
প্রশ্ন জাগে, তাহলে আওয়ামী লীগ গলা ফাঁটিয়ে যে কথা বার বার বলছে যে, বিএনপি-জামায়াত আসলে কখনোই স্বাধীনতা চায়নি। তারা এখন যা করে তা শুধুই লোক দেখানো, সেটা প্রমাণ করার জন্য।
অনেকে বলেছেন, আজহারুল ইসলাম মান্নান তেমন লেখাপড়া জানেন না, মূর্খ-শুর্খ মানুষ! তিনি যদি করতেন তা হলে লেখাপড়া বা বিদ্যাবুদ্ধির বিষয় বিবেচনা করে অন্যভাবে দেখত সাধারণ মানুষ! কিন্তু সজিব না-কি শিক্ষিত ছেলে! তাছাড়া যুবদলের মতো একটি দলে জেলা পর্যায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিরতো নিদেন পক্ষে কাÐজ্ঞানহীনের মতো বা দায়িত্বহীনের মতো কাজ করাটা সমিচিন নয় অবশ্যই।
তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যে, সজিব ভুল করে জুতা নিয়েই উঠে গেছে, কিন্তু ছবি বা ভিডিও ফুটেজতো সে কথা বলে না। ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, বেদিতে ওঠা প্রতিটি নেতাকর্মীর পায়েই পাদুকা ছিল। তাহলে এটা কি ভুল না অন্যায়, তা বিবেকবান মানুষই বলতে পারবেন।
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, অনেক লোকজনের সমাগম হওয়ায় জুতা খুঁজে পাওয়া যাবেনা ভেবে তা পায়েই রেখেছিলেন। হয়ত ধারণা করেছিলেন, সাংবাদিকরা বুধবার চোখে দেখেনা বা কম দেখে বা তাদের বিবেক মরে গেছে, সেই কারণে জুতা নিয়েই বেদিতে উঠেছেন।
যদি তা-ই হয়, তাহলে বলতে হয়-যদি একজোড়া জুতার মায়াই ছাড়তে না পারেন, তাহলে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ পরিচালনা করবেন কিভাবে আপনারা। তাহলে কি আওয়ামী লীগের সেই কথাই প্রমাণ হয় যে, বিএনপি-জামায়াতরা দেশের জন্য ভাল করার মায়া কান্না করে। লোক দেখানো দেশ ভালবাসার নাটক করে। শুধুমাত্র ফটোশেসন করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর নামে ভাওতাভাজি করে।
আশ্চর্য, একজন নয়, দু’জন নয় – শতশত নেতাকর্মী, সবার পায়ে জুতা। হয়ত, লেখাটি অনেকে পড়ে বিভিন্ন মন্তব্য করবেন। আমাকে হয়ত বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িয়ে অনেক বিশেষনও দেবেন। তা- দিয়েন সমস্যা নাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আমার লেখার কথাগুলো মিথ্যা হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় যুবদল এমন সচেতন ও দায়িত্বশীল নেতার কি ব্যবস্থা নেন তা-ও সাধারণ মানুষ দেখবে বলে আমি মনে করি।
Leave a Reply